রাজনীতি · শিরোনামহীন

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি?

ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ।

কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত?

তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো।

গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর।

মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৬ মাস।

এরপর, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ ভূমিতে নির্বাচনী প্রচারণা করতে চাইলে, এবং প্রত্যেক মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে চাইলে একজন খলীফা প্রার্থীর কমপক্ষে ১০ বছর লেগে যেতে। তারপর ভোটারগণ নির্বাচন কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে দিতে এবং ভোট গণনা করে কেন্দ্রে পাঠাতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর।

সব মিলিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে খলিফা নির্বাচন করতে চাইলে তখন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর সময় লেগে যেতো। এর মধ্যেই যে খলিফাকে পরিবর্তন করার জন্যে নির্বাচন করা হচ্ছিলো, তিনি কবরে চলে যেতেন।
_______

উপরে এতোগুলো কথা বলার কারণ হলো, রাষ্ট্র পদ্ধতি সময়ের সাথে মিলে চলে। ১৬১৭ সালে কেউ চাইলেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারতো না। আবার, এখন ২০১৭ সালে এসে কেউ চাইলেও অতীতের নিয়মে খেলাফত কায়েম করতে পারবে না।

Leave a comment