কুরআন · ধর্ম · রাজনীতি

বড় জিহাদ কি? কিভাবে লড়তে হয়?

আমাদের উপর জিহাদ ফরজ করা হয়েছে, তাই আমাদেরকে জিহাদ করতে হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোন জিহাদ সবচেয়ে বড়?

আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

فَلَا تُطِعِ ٱلْكَـٰفِرِينَ وَجَـٰهِدْهُم بِهِۦ جِهَادًۭا كَبِيرًۭا

“তুমি কাফেরদের আনুগত্য করবে না এবং তাদের সাথে কোর’আনের সাহায্যে বড় জিহাদ কর”। [সূরা ২৫/ ফুরকান – ৫২]

এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট যে, তরবারির সাহায্যে নয়, বরং কোর’আনের সাহায্যে যে জিহাদ করা হয়, তা হল সবচেয়ে বড় জিহাদ। অর্থাৎ, কোর’আনের মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ-ই হল সবচেয়ে বড় জিহাদ।

এছাড়া, উত্তম জিহাদ সম্পর্কে রাসূল (স)-কে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বলেন –

عن أبي ذر قال: قلت يا رسول الله أي الجهاد أفضل قال: أن يجاهد الرجل نفسه وهواه

“হযরত আবু জর রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, “কোন জিহাদ সর্বোত্তম?” তিনি বললেন, “নফস ও কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদই উত্তম জিহাদ”।

[সুয়ুতী, জামিউল আহাদীস, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪১৬৮৩। কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফআল, হাদিস নং- ১১৭৮০]

নফস ও কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে আল কোর’আন।

এখন প্রশ্ন হলো, কেন এবং কিভাবে কোর’আন দিয়ে জিহাদ করতে হবে?

উত্তর দিচ্ছেন আল্লাহ –

وَقَالَ ٱلرَّسُولُ يَـٰرَبِّ إِنَّ قَوْمِى ٱتَّخَذُوا۟ هَـٰذَا ٱلْقُرْءَانَ مَهْجُورًۭا

“রাসূল বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় তো এই কোর’আনকে পরিত্যাজ্য হিসাবে গ্রহণ করেছে।” [সূরা ২৫/ ফুরকান – ৩০]

আমাদের সমাজে মানুষ কোর’আনকে তাঁদের প্রাত্যহিক জীবনে তেমন কোনো গুরুত্ব-ই দেয় না। একটি পরিত্যাজ্য জিনিস আমাদের ঘরে যেভাবে পড়ে থাকে, তেমনি কোর’আনও আমাদের ঘরে পরিত্যাজ্য হিসাবে পড়ে থাকে।

সুতরাং, সবচেয়ে বড় জিহাদ হলো কোর’আনকে এমন বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে উপস্থাপন করা, যাতে সাধারণ মানুষ মনে করে কোর’আন তাঁদের প্রাত্যহিক জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ।
_______

এ জিহাদে কি ধরণের বাধা আসবে? অথবা, এ জিহাদের কারা প্রতিপক্ষ হিসাবে থাকবে?

উত্তর দিচ্ছেন আল্লাহ –

وَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَا تَسْمَعُوا۟ لِهَـٰذَا ٱلْقُرْءَانِ وَٱلْغَوْا۟ فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُونَ

“কাফেররা বলে, তোমরা এ কোর’আন শ্রবণ করো না এবং (কোর’আনের আলোচনায়) শোরগোল সৃষ্টি কর, যাতে তোমরা জয়ী হও”। [সূরা ৪১/ হা-মীম আস সাজদা – ২৬]

কোর’আনকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে তুলে ধরে বড় জিহাদ করতে গেলে এমন কিছু মানুষকে আপনি দেখবেন, যারা আপনার কোর’আনের আলোচনায় কেবল শোরগোল সৃষ্টি করছে। এরাই হলো আপনার প্রতিপক্ষ।

যেমন, আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় কোর’আনের সাহায্যে কিছু বলেন, কিছু মানুষকে দেখবেন, তাঁরা কোর’আনকে বুঝার চেষ্টা না করে উল্টো আপনাকে গালাগালি করতে শুরু করবে।
_______

কোর’আনের আলোচনায় প্রতিপক্ষ যখন আপনাকে গালাগালি করবে, তখন আপনি কি করবেন?

উত্তর দিচ্ছেন আল্লাহ –

وَلَا تَسْتَوِى ٱلْحَسَنَةُ وَلَا ٱلسَّيِّئَةُ ۚ ٱدْفَعْ بِٱلَّتِى هِىَ أَحْسَنُ فَإِذَا ٱلَّذِى بَيْنَكَ وَبَيْنَهُۥ عَدَ‌ٰوَةٌۭ كَأَنَّهُۥ وَلِىٌّ حَمِيمٌۭ

“ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। ভালো দ্বারা তুমি মন্দকে প্রতিহত কর। তখন দেখবে তোমার সাথে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে”। [সূরা ৪১/ হা-মীম আস সাজদা – ৩৪]

অর্থাৎ, কেউ আপনাকে যতই গালাগালি করুক, আপনি তাঁদের গালাগালির জবাবে গালাগালি করবেন না। বরং মন্দকে ভালো দ্বারা প্রতিহত করুন।

যেমন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ আপনাকে গালাগালি করলে বা আপনার বক্তব্যের উপর শোরগোল সৃষ্টি করলে, আপনি তাঁদের কমেন্টের জবাবে কিছু না বলে তাঁদেরকে একটা ‘লাভ’ চিহ্ন উপহার দিন।
_______

কোর’আনের সাহায্যে সবচেয়ে বড় জিহাদ বা বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদে আপনিও অংশ নিন।

Leave a comment