শিরোনামহীন

নাস্তিক কাকে বলে?নাস্তিকতা কি স্বাভাবিক কোনো কিছু?

কোর’আনে সরাসরি কোথাও নাস্তিক শব্দটি নেই। কারণ, নাস্তিক একটি আধুনিক ও কৃত্রিম শব্দ।

অনেকে মনে করেন, নাস্তিকরা কোনো ধরণের স্রষ্টাকে বিশ্বাস করে না। আসলে এটি একটি ভুল ধরনা। নাস্তিকরা যে স্রষ্টায় বিশ্বাস করে তার নাম – হাওয়া বা প্রবৃত্তি।

যেমন, কোর’আনে বলা হয়েছে –

أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا

“আপনি কি তাকে দেখেন না, যে প্রবৃত্তিকে তার উপাস্য রূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার উকিল হবেন?” [সূরা ২৫/ফুরকান – ৪৩]

অর্থাৎ, যারা নিজের কামনা, বাসনা ও প্রবৃত্তিকে পূজা করে, তাদেরকে-ই আধুনিক ভাষায় নাস্তিক বলা হয়। সহজ ভাষায় নাস্তিকদেরকে আমরা ‘প্রবৃত্তি পূজারী’ বলতে পারি। কোর’আনে এদেরকে মুশরিক বলা হয়েছে।

আমাদের সমাজে আমরা দেখি, প্রবৃত্তি পূজারী বা নাস্তিকরা নিজেদেরকে অনেক জ্ঞানী মনে করেন। আসলে কি তারা জ্ঞানী?

এ প্রশ্নের উত্তর সাথে সাথেই আল্লাহ তায়ালা পরবর্তী আয়াতে দিয়ে দিয়েছেন।

أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُونَ أَوْ يَعْقِلُونَ ۚ إِنْ هُمْ إِلَّا كَٱلْأَنْعَـٰمِ ۖ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيلًا

“আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শুনে অথবা যুক্তি-বুদ্ধির ব্যবহার করে? আসলে তারা তো চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং আরও বেশি পথভ্রষ্ট”। [সূরা ২৫/ফুরকান – ৪৪]

অর্থাৎ, প্রবৃত্তির পূজা করা আর যুক্তি-বুদ্ধি ব্যবহার করা এক নয়। নাস্তিকরা নিজেদের অনেক জ্ঞানী মনে করলেও তারা আসলে পশুদের মতই মূর্খ।

এ কারণেই বিজ্ঞানের ইতিহাসে আমরা দেখি, ইবনে সিনা, আল-খোয়ারিজমি, আল বিরুনী, আল কিনদি, নিকোলাউস কোপের্নিকুস, ইয়োহানেস কেপলার, গ্যালিলিও গ্যালিলি, এবং স্যার আইজাক নিউটনের মত পৃথিবীর বড় বড় জ্ঞানী ও বিজ্ঞানীরা কেউই নাস্তিক ছিলেন না। সবাই ছিলেন আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী এবং অনেক বড় ধার্মিক।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি, যারা সত্যিকার অর্থে জ্ঞান ও বুদ্ধির যথার্থ ব্যবহার না করে, নিজেই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে এবং নিজেই নিজের প্রবৃত্তির পূজা করে, তাদেরকে-ই নাস্তিক বলা হয়।

মানব শিশু জন্ম গ্রহণ করার আগেই আল্লাহ তায়ালা তার মধ্যে কয়েকটি বিষয় ডিফল্ট সেটিং করে দেন; শিশুকে তা অন্য কারো কাছ থেকে শিখতে হয় না। যেমন, কান্না। শিশু জন্ম গ্রহণ করর পরেই কাঁদতে পারে, এটা শিশুকে অন্য কারো কাজ থেকে শিখতে হয় না।

তেমনি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করাটাও প্রত্যেক শিশুর ডিফল্ট সেটিং করা থাকে। পরিবার ও পরিবেশ থেকে শিশুকে চাপ না দিলে সে মনের অজান্তেই এক আল্লাহকে বিশ্বাস করতে শুরু করে।

শিশুদের সাইকোলজি ও বিশ্বাস নিয়ে জাস্টিন ব্যারেট [Justin Barrett] একটি গবেষণামূলক বই লিখেছেন। নাম – Born Believers: The Science of Children’s Religious Belief

এখানে তিনি অনেকগুলো জরিপ উপস্থাপন করেছেন। যেমন,

কোনো শিশুদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয়, “এই পাহাড়টি কি নিজে নিজে তৈরি হয়েছে, না এটাকে কেউ বানিয়েছে?” তখন শিশুরা উত্তর দেয়, “পাহাড়টা কেউ একজন বানিয়েছে”।

কেউ বলে, এটা আল্লাহ বানিয়েছে। কেউ বলে, এটা আমার আব্বু বানিয়েছে। অথবা, কেউ বলে, এটা অনেক মানুষ মিলে বানিয়েছে। কিন্তু কেউ বলে না যে, এটা এমনি এমনিই তৈরি হয়েছে।

এভাবে অনেকগুলো জরিপ করে জাস্টিন ব্যারেট দেখিয়েছেন যে, প্রত্যেক শিশুর মনে ও মস্তিষ্কে স্বভাবগতভাবেই আল্লাহর অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে। অর্থাৎ, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস মানুষের স্বভাবগত একটি বিষয়।

তিনি তাঁর বইয়ের শেষের দিকে এসে বলেন –

“Scientific research on children’s developing minds and supernatural beliefs suggests that children normally and rapidly acquire minds that facilitate belief in supernatural agents. Particularly in the first year after birth, children distinguish between agents and non-agents, understanding agents as able to move themselves in purposeful ways to pursue goals. They are keen to find agency around them, even given scant evidence. Not long after their first birthday, babies appear to understand that agents, but not natural forces or ordinary objects, can create order out of disorder…This tendency to see function and purpose, plus an understanding that purpose and order come from minded beings, makes children likely to see natural phenomena as intentionally created. Who is the Creator? Children know people are not good candidates. It must have been a god…children are born believers of what I call natural religion.”

Source: Justin Barrett, Born Believers, Google, p – 135

অর্থাৎ, প্রত্যেক শিশু-ই আল্লাহর ধারণা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। এবং যার নাম হলো স্বভাব ধর্ম।
________

এ বিষয়টি খুবই সহজভাবে আমরা কোর’আন ও হাদিস থেকে বুঝতে পারি। যেমন, আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًۭا ۚ فِطْرَتَ ٱللَّهِ ٱلَّتِى فَطَرَ ٱلنَّاسَ عَلَيْهَا ۚ لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ ٱللَّهِ ۚ ذَ‌ٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلْقَيِّمُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

“তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহ তাঁর প্রকৃতির উপর ভিত্তি করেই মানুষের প্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।” [সূরা ৩০/রূম – ৩০]

অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যে স্বভাবজাত ধর্ম দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, মানুষের উচিত সেই স্বভাবজাত ধর্মের উপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রাখা। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ নিজের জন্মগত ধর্মের উপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারে না। পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে মানুষ তার স্বভাবগত ধর্মকে ভুলে গিয়ে কৃত্রিম বা নকল একটি ধর্ম তৈরি করে নেয়।

রাসূল (স) বলেন –

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُّ مَوْلُودٍ يُولَدُ عَلَى الفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ، أَوْ يُنَصِّرَانِهِ، أَوْ يُمَجِّسَانِهِ، كَمَثَلِ البَهِيمَةِ تُنْتَجُ البَهِيمَةَ هَلْ تَرَى فِيهَا جَدْعَاءَ»

“প্রত্যেক নবজাতক শিশু ফিতরাত বা স্বভাব ধর্মের উপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার মাতাপিতা তাকে ইয়াহূদী বা খ্রিষ্টান অথবা অগ্নি উপাসক বানায়। যেমন চতুষ্পদ জন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে জন্মগত ভাবে কানকাটা দেখতে পাও?” [বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ১৩৮৫]

পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে কিছু না কিছু বিষয় বিশ্বাস করতে হয়। কেউ স্বভাবগতভাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করে, আবার কেউ সমাজের তৈরি কৃত্রিম স্রষ্টায় বিশ্বাস করে। কোনো নাস্তিক যদি বলেন, আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি না, তার মানে তিনি ভ্রান্ত ও অস্বাভাবিক কোনো কিছুকে বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস ছাড়া কেউ থাকতে পারে না।

যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন –

وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِٱلْبَـٰطِلِ وَكَفَرُوا۟ بِٱللَّهِ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْخَـٰسِرُونَ

“যারা ভুয়া বা মিথ্যা জিনিসে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহকে অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত”। [সূরা ২৯ /আনকাবুত – ৫২]

অর্থাৎ, যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, তারা মিথ্যা, অস্বাভাবিক ও ভুয়া কোনো কিছুকে বিশ্বাস করতে হয়। 
___________

অনুসিদ্ধান্ত – ১

পৃথিবীর প্রতিটি শিশুর অন্তরে ও মস্তিষ্কে আল্লাহকে বিশ্বাস করার জন্যে একটি নির্দিষ্ট স্থান থাকে। কেউ যদি তার পরিবার, পরিবেশ ও শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে অন্তরের নির্দিষ্ট স্থানে আল্লাহকে না বসাতে পারে, তাহলে বিভিন্ন ভ্রান্ত স্রষ্টা দ্বারা তার ঐ স্থানটি পূরণ হয়ে যায়।

অনুসিদ্ধান্ত – ২

আল্লাহকে বিশ্বাস করা প্রতিটি মানুষের প্রাকৃতিক ও স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। কেউ তার প্রাকৃতিক-স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যকে অবদমিত করলে বা ঢেকে রাখলে তাকে কুফর বলা হয়।

অনুসিদ্ধান্ত – ৩

নাস্তিকতা স্বাভাবিক কোনো কিছু নয়। এটি একটি অস্বাভাবিক, ভ্রান্ত ও কৃত্রিম ধর্মের নাম।

June 22, 2017 at 3:19 PM