দর্শন · ধর্ম · শিরোনামহীন

এসো, আজি সুন্দরের রঙে হই রঙিন

সুন্দরকে কে না ভালোবাসে! সবাই সুন্দর হতে চায়, কিন্তু সুন্দর হওয়ার কৌশল খুব অল্প মানুষই জানে।

শিল্পীরা বলেন, সুন্দর হতে হলে নাকি রঙের ধারণা থাকতে হয়। সুন্দরের সাথে রঙের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোন রঙের সাথে কোন রঙ ভালো মিলে, তা না জানলে সুন্দরের শিল্পী হওয়া যায় না। যার কাছে রঙের জ্ঞান নেই, সে সৌন্দর্যকে অবলোকন করতে পারে না। সুন্দরকে আমরা বুঝি রঙের মাধ্যমে। রঙের সাথে রঙের মিলনেই সৌন্দর্য ফুটে উঠে।

কিন্তু, রঙের কি কোনো অস্তিত্ব আছে? রঙ আসলে কি?

বিজ্ঞানীরা বলেন, রঙ হলো আলোরই একটি রূপ। আলোর মাঝেই সকল রঙ লুকায়িত থাকে। যদি কোনো আলো প্রিজমের এক পাশ দিয়ে প্রবেশ করে, তাহলে অন্য পাশে দিয়ে সাত রঙ হয়ে বের হয়। আমরা একে বলি রঙধনু। রঙধনুর মাধ্যমে বিশ্বের সব রঙ তৈরি হয়।

আচ্ছা, রঙের উৎস যদি আলো হয়, তাহলে আলোর আলোর উৎস কি?

আমরা জানি, আলোর প্রধান উৎস সূর্য। কিন্তু সব ধরণের আলোর উৎস কি সূর্য? আপনি যে লেখাটি পড়ছেন, এই আলো কোত্থেকে এসেছে? বিদ্যুতের মাধ্যমে; তাই না? বিদ্যুৎ কোত্থেকে এসেছে? কয়লা, পানি বা গ্যাস জাতীয় পদার্থ থেকে। অর্থাৎ, কঠিন, তরল বা বায়বীয় সব ধরণের পদার্থের মাঝেই আলোর উপাদান রয়েছে। আচ্ছা, আসমান-জমিন বা মহাবিশ্বের আলোর উৎস কি তাহলে?

কোর’আনে বলা হয়েছে, আসমান ও জমিনের আলোর উৎস হলেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহ আছেন বলেই আলো আছে। তিনি আমাদেরকে দেখার শক্তি দিয়েছেন বলেই আমাদের চোখ আলো গ্রহণ করতে পারে। আলোর কণা-তরঙ্গ আমাদের চোখ দিয়ে প্রবেশ করে আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরণের দৃশ্য তৈরি করে। মস্তিষ্কে যে ছবিগুলো তৈরি হয় তা আমাদের মনে সৌন্দর্যের অনুভূতি জাগ্রত করে।

অর্থাৎ,

মহাবিশ্বের যাবতীয় সুন্দরের উৎস আল্লাহ তায়ালা। তাঁর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম ও গুন রয়েছে । এগুলো দিয়েই সাজানো হয়েছে এই মহাবিশ্বকে।

প্রশ্ন হতে পারে, আল্লাহর গুণবাচক নাম মাত্র ৯৯ টি। এই ৯৯ টি গুণবাচক নাম দিয়ে মহাবিশ্বকে এত সুন্দরভাবে সাজানো সম্ভব কিভাবে?

মহাবিশ্বে আমরা যা কিছু দেখি, সব কিছু তৈরি হয়েছে মাত্র ১১৮ টি মৌলিক পদার্থ দিয়ে। আরো গভীরে গিয়ে দেখলে মাত্র ৩ টি মৌলিক কণা দিয়ে এই মহা বিশ্বের মিলিয়ন-বিলিয়ন বা অগণিত পদার্থ তৈরি হয়েছে। আরো সূক্ষ্মভাবে দেখলে মাত্র একটি স্ট্রিং দিয়েই মহাবিশ্বের যাবতীয় সব কিছু তৈরি হয়েছে। সুতরাং, মহাবিশ্বের সকল সৌন্দর্য আল্লাহর গুণাবলীর-ই বিভিন্ন রূপ মাত্র।

তাই,

পৃথিবীতে কেউ যদি সুন্দর মানুষ হতে চায়, তাহলে তাঁকে আল্লাহর রঙে রঙিন হতে হয়। আল্লাহর রঙে রঙিন হবার অফুরন্ত সুযোগ তিনি মানুষকে দিয়েছেন। মানুষদের মধ্যে যারা আল্লাহর গুনে যতবেশি গুণান্বিত হতে পারে, তাঁরাই পৃথিবীতে ততবেশি সুন্দর হয়। তাই আল্লাহ তায়ালা বলেন –

صِبْغَةَ اللَّهِ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ صِبْغَةً وَنَحْنُ لَهُ عَابِدُونَ

“আল্লাহর রং গ্রহণ কর। আল্লাহর রং এর চাইতে সুন্দর রং আর কার হতে পারে? আমরা তাঁরই এবাদত করি। [সূরা ২/বাকারা – ১৩৮]

আসলে, আল্লাহ তায়ালার রঙ-ই মহাবিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর রঙ। যারা আল্লাহর রঙে নিজেদেরকে রঙিন করতে পারে, তারাই পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সুন্দর বা সুন্দরী হতে পারে।

Leave a comment